বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৯

পোলাও পাতার চাষ

পোলাও পাতার চাষ

গাছটা ঠাকুরগাঁওয়ের জঙ্গলে দেখেছি। অযত্নেই বেশ ঝোপ করে জন্মেছে। পরে সেখানকার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বেড়ানোর সময় কয়েকটা বাড়িতেও দেখলাম পোলাও পাতার গাছ। ঘরের কোণে এক পাশে ঝোপ করে বাড়ছে সে গাছ। আবার সুন্দরবনের ঠিক এপাড়ে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ বাজারেও দেখলাম এক দোকানি টবে ও মাটিতে কয়েকটা পোলাও পাতার গাছ লাগিয়েছেন। পরে খুলনাতেও দেখা হলো পোলাও পাতা গাছের সাথে। তার মানে গাছটা এ দেশে মোটেই দুর্লভ নয়। এক প্রকার বিনা চাষে ও যত্নেই সে বেড়ে ওঠে। পোলাও পাতার স্বাদ অবশ্য প্রথম পেয়েছিলাম ওই ঠাকুরগাঁতেই, এক বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণে। দুধবিহীন লাল রঙের সেই চা থেকে পোলাওয়ের ঘ্রাণ আসছিল। অপূর্ব লাগছিল স্বাদটা। কেননা সচরাচর আমরা যে চা পান করি, সেই স্বাদই মুখে লেগে থাকে, ওই স্বাদেই আমরা অভ্যস্ত। তাই ভিন্ন স্বাদ পেলেই সেটা অন্য রকম লাগে। বাড়ির গৃহিণীকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ঘরের কোণে থাকা গাছটা দেখিয়ে দিলেন এবং তা থেকে এক টুকরো পাতা ছিঁড়ে এনে দিলেন। বললেন, ডলে ঘ্রাণ শুঁকে দেখুন। তা-ই করলাম, অবিকল কাটারিভোগ চালের ঘ্রাণ এলো পাতা থেকে। বুঝলাম, পোলাও পাতা নামটা ওর যথার্থ। গৃহিণী জানালেন, ওই পাতার গুণে তারা মাঝে মধ্যে সাধারণ চাল দিয়েই পোলাওয়ের ঘ্রাণমাখা ভাত খান। এত যার গুণ, সেই গাছটিই কিনা অচেনা!

গাছের পরিচয়


পোলাও পাতার গাছের আকৃতি ও পাতার চেহারা দেখতে অনেকটা কেয়াগাছের মতো। তবে কেয়াগাছের মতো অত বড় হয় না। ছোট ঝোপালো প্রকৃতির গাছ। গাছ বহুবর্ষজীবী, একবার লাগালে বাঁচে অনেক দিন। আনারসগাছের মতো মোথা থেকে চার দিকে কিছুটা খাড়াভাবে তলোয়ারের মতো পাতা বাড়তে থাকে। পাতার দৈর্ঘ্য ৫০-৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্খ ৩-৪ সেন্টিমিটার। পাতা চকচকে সবুজ, পুরু চামড়ার মতো, একটু শক্ত, পাতার কিনারা মসৃণ। অগ্রভাগ সুঁচালো। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pandanus odoratissimus Pandanaceae।


ব্যবহার

গাছের পাতায় পোলাওয়ের মতো গìধ আছে বলেই এর নাম পোলাও পাতা গাছ। এই সুগìধ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সুরভিত করতেই পোলাও পাতা গাছ ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে সুগìধবিহীন সাধারণ চাল দিয়ে ভাত রান্নার সময় এই পাতা ব্যবহারে সেসব ভাতেও পোলাওয়ের ঘ্রাণ আসে। ভাত রেঁধে মাড় ফেলে দেয়ার পর তাতে পোলাও পাতা মিশানো হয়। পোলাও পাতা ৩-৪ সেন্টিমিটার টুকরো টুকরো করে কেটে গরম ভাতের স্তরে স্তরে বিছিয়ে দেয়া হয়। তারপর একটা ঢাকনা দিয়ে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা হয়। কিছুক্ষণ এভাবে রেখে দিলে ভাতে সুঘ্রাণ আসে। খাওয়ার সময় সেই ভাত থেকে পোলাওয়ের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, ভাত খেতে তৃপ্তি আসে। তবে চা বানানোর জন্য চায়ের পানি ফুটে এলে তার ভেতর পোলাও পাতার কয়েকটা টুকরো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর সেই পানি ছেঁকে চায়ের মতো খেলে সেই চা থেকেও পোলাওয়ের সুঘ্রাণ ভেসে আসে। একইভাবে বিভিন্ন রকম স্যুপ, জাউভাত, ফিরনি, পায়েস ইত্যাদি সুগìধযুক্ত করতে পোলাও পাতা ব্যবহার করা যায়।


চাষাবাদ

গাছের কাণ্ডের গিঁট থেকে কুশির মতো চারা বের হয়। এসব চারা লাগিয়ে নতুন গাছ জন্মানো যায়। চাষের জন্য প্রথমে গাছ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেই গাছ লাগিয়ে বড় করতে হবে। বড় হলে তার কাণ্ডের চার পাশ থেকে তেউড় বা চারা বের হবে। সেসব চারা গাছ থেকে কেটে আলাদা করে বীজতলায় পুঁতে পানি দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই তার গোড়া থেকে শিকড় বের হবে। সেসব চারা সরাসরি জমিতে লাগানো যেতে পারে অথবা বাড়ির আঙিনায় ঝোপ করার জন্য এক জায়গায় কয়েকটা গাছ লাগানো যেতে পারে। লাগানোর পর কয়েক দিন সেচ দেয়া ছাড়া আর বিশেষ কোনো যত্নের দরকার হয় না। আধোছায়া ও রোদেলা জায়গায় ভালো জন্মে। কোনো সার দেয়ার দরকার নেই। তবে লাগানোর সময় মাটির সাথে বেশি করে জৈবসার মিশিয়ে দিলে পরে গাছের চেহারা ও বৃদ্ধি ভালো হয়। বছরের যেকোনো সময় গাছ থেকে পাতা তোলা যায়। তোলার সময় গোড়ার দিকের বয়স্ক পাতা তোলাই ভালো, না হলে সেগুলো পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। গাছ যেমন কষ্ট সইতে পারে তেমনি বাড়েও ভালো। তবে বাণিজ্যিকভাবে এই পাতা চাষের সময় এখনো আসেনি।

দেখুন পাম চাষ : বহুমুখি লাভের কৃষি

লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়

তথ্যসূত্র: দৈনিক নয়া দিগন্ত

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

deshitech

deshitech (দেশীটেক) ফেসবুকে একটি সাহায্যকারি গ্রুপ, যারা বিনা পারিশ্রমিকে কম্পিউটার বিষয়ক সাহায্য করে থাকে।

প্রথমে আপনি deshitech এর সদস্য হয়ে যান। এরপর লিখুন আপনার কি সমস্যা। অপেক্ষা করুন। আপনার সমাধানটি দেখুন চলে এসেছে।


এছাড়াও, ://www.deshitech.com নামের সাইটটি অচিরেই আপনাদের মাঝে উপস্থিত হবে। আশা করি, যে কোন টেকনিক্যাল হেল্প আমরা করতে পারব।

deshitech

deshitech. দেশীটেক।
দেশীয় টেকনোলজি।
আমাদের এখানে পাবেন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী কৃত নতুন সব দৈনন্দিন সাজসরঞ্জাম। আমাদের ওয়েবসাইট http://www.deshitech.com এখন কর্মাধীন। কিন্তু আমাদের টুলবার (toolbar) deshitech toolbar এখন অনলাইনে পাবেন। এই টুলবারে আপনার পছন্দের অনেক কিছুই পাবেন বলে আশা করি। তবে হা, এই টুলবারে (toolbar) আপনারা আরো যা কিছু চান, অনুগ্রহ করে বলুন, আমরা আপনার পছন্দের লিংক টি এখানে দিয়ে দেব।


আইয়ুব হোসেন