বৃহস্পতিবার, ২২ জুলাই, ২০১০

মৌমাছি চাষের বিস্তারিত তথ্য

মৌমাছি চাষ

মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকেই বলা হয় মৌমাচি পালন। পালনের জন্য ভারতীয় জাতের মৌমাছি সবচেয়ে উপযোগী। ছোট সেনালি বর্ণের ও সাদা ডোরাকাটা এ মৌমাছিরা গাছের গর্তে বা অন্য কো গহবরে একাধিক সমান্তরাল চাক তৈরি করে বসবাস করে। গর্তে প্রবেশ পথের সঙ্গে চাকগুলো সমান্তরালভাবে সাজানো থাকে। মৌমাছিদের এরূপ বাসস্থানের সাথে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করা হয় কাঠের বাক্স। কাঠের মৌবাক্স মৌমাছি পালনই আধুনিক ব্যবস্থা। লোকালয় ও বিভিন্ন বনাঞ্চলের মৌচাক থেকেই তো এই মধু আর মোম সংগ্রহ করা সম্ভব । তবু কেন এই মৌমাছি পালন?

প্রয়োজনীয়তা

১। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় সাধারণত চাকটিকে নষ্ট করে ফেলা হয়। এ কাজের সময় অনেক ক্ষেত্রে বিপুলসংখ্যক মৌমাছিও মারা পড়ে। এছাড়াও চাকে অবস্থিত ডিম ও বাচ্চা নষ্ট হয়। এর ফলে দিন দিন মৌমাছির সংখ্যা কমে যাচ্ছে। ইদানিং ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক ব্যবহারের ফলে লোকালয়ে আশঙ্কাজনকভাবে মৌমাছির সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। এতেফসলের ফলনও কমে যাচ্ছে। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে মৌমাছির সংখ্যাকে বাড়ানো সম্ভব।

২। মৌমাছির বঞ্চিত মধু আমরা খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে থাকি। মধুর পুষ্টিগুণ চাড়াও নানাবিধ রোঘ উপশমকারী ক্ষমতা রয়েছে। সাধারণ নিয়মে মৌচাক চেপে মধু বের করা হয়। এতে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন যেমন সম্পূর্ণ হয় না তেমনি সেই মধুতে রয়ে যায় মোম, মৌমাছির ডিম ও বাচ্চা নিস্পোষিত রস এবং অন্যান্য আবর্জনা। পালন করা মৌমাছির চাক থেকে যান্ত্রিক উপায়ে নিষ্কাশিত মধু যেমন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৩। মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাচির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক ষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিস্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোয় মধু মেন বিশুদ্ধ, তেমনি নিষ্কাশনও হয় পুরোপুরি।

৪। মৌচাক থেকে মোম পাওয়া যায়, কিন্তু পালন করা মৌমাছির চাক থেকে মোম সংগ্রহ করা হয় না। মোম সংগ্রহ করলে চাক নষ্ট হয়। নতুন চাক বানাতে মৌমাছির অনেক সময় লাগে। এতে মধু নিষ্কাশনের পর চাক অক্ষত থাকে বলে মৌমাছিরা সাথে সাথেই আবার শুন্য কুঠুরিগুলোরয় মধু জমাতে থাকে। এছাড়া মৌ-বাক্সে ভেতরে যে কাঠের ফ্রেম থাকে তাতে মোমের তৈরি ছাঁচ বা 'কম্ব ফাউন্ডেশন সিট' দিলে মৌমাছিরা তাড়াতাড়ি চাক তৈরি করতে পারে। এজন্য মৌমাছি পালনের মাধ্যমে অল্প সময়ে অনেক বেশী মধু পাওয়া সম্ভব।

৫। ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়ানোর সময় মৌমাছিরা তাদের পা এবং বুকের লোমের ফুলের অসংখ্য পরাগরেণু বয়ে বেড়ায়। এক ফুলের পরাগরেণু অন্য ফুলের গর্ভমুণ্ডে পড়লে পরাগায়ন ঘটে, যার ফলশ্রুতিতে উৎপন্ন হয় ফল। এভাবে মৌমাছিরা পরাগায়নের মাধ্যমে হিসাবে কাজ করে ফল ও ফসলের উৎপাদন বাড়ায়। বিশেষ মৌসুমে যখন কোনো বাগান বা ফসলের ক্ষেতে প্রচুর ফুল ফোনে তখন মৌমাছিসহ বাঙ্টিকে সেখানে স্থানান্তর করলে একদিকে প্রচুর মদু সঙ্গৃহীত হবে, অন্যদিকে ফল বা ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পাবে।

৬। মৌমাছি পালনকে কুটির শিল্প হিসাবে গ্রহণ করলে অনেক বেকারের কর্মসংস্থার হবে। গ্রামের স্বল্প আয়ের পরিবারগুলোতে মৌমাছি পালন একটি বাড়তি আয়ের সুযোগ দেবে।

পালন

যে কাঠের বাক্স মৌমাছি পালন করা হয় সেটি বিভিন্ন অংশের সমন্বয়ে তৈরী। তলার কাঠ, বাচ্চাঘর, মধুঘর, ঢাকনা, ও ছাদ হচ্ছে একটি মৌবাঙ্রে বিভিন্ন অংশ। মধুঘর ও বাচ্চাঘরে সারি সারি কাঠের ফ্রেম সাজিয়ে দেয়া হয়। এ ফ্রেমেই মৌমাছিরা চক তৈরি করে। কোনো গাছের গর্ত থেকে মৌমাছি ও তাদের চাক সংগ্রহ করার পর বাক্স দেয়া হয়। একটি মৌমাছি পরিবারে থাকে মাত্র একটি রানী মৌমাছি, কিছু পুরুষ এবং অধিকাংশ শ্রমিক মৌমাছি। চাক তৈরি, বাচ্চাদের লালন পালন, মধু এবং ফুলের পরাগ সংগ্রহ ইইত্যাদি সব কাজ শ্রমিক মৌমাছিরাই সম্পাদন করে। কিন্তু মৌমাছি পালন করে চাক থেকে মধু পেতে হলে একজন মৌমাছি পালককে মৌমাছিদের যত্ন নিতে হবে। বছরের বিভিন্ন ঋতুতে নানা প্রকার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং এদের রোগ প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া মৌমাছি পালন তথ্য পরিচর্যার অন্তভূর্ক্ত । এখানে সংক্ষেপে এ নিয়ে কিছু আলোচনা করা হল-

ক) মৌসুমী ব্যবস্থাপনা

বিভিন্ন ঋতুতে মৌমাছির পরিচর্যাকে তিনটি ভগে ভাগ করা যায়। যেমন-মৌমাছির বংশ বৃদ্ধির সময়ে, যখন প্রকৃতিতে প্রচুর খাদ্য পাওয়া যায় তখন এবং খাদ্যসঙ্কট চলাকালে।

১। বংশ বৃদ্ধিকালে-রানী মৌমাছি যখন প্রচুর ডিম পেড়ে একটি মৌবাক্সে মৌমাছির সংখ্যা বাড়তে থাকে সে সময়টাই হল বদ্ধিকাল। এ সময় প্রকৃতিতে ফুলের সমারোহ দেখা যায় এবং মৌমাছিরা প্রচুর পরিমানে পরাগরেণু এবং ফুলের রস সংগ্রহ করে। বংশ বৃদ্ধিকালে বাচ্চাঘরে নতুন ফ্রেম দিতে হবে। বাক্স কোনো পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ রাণীকে সরিয়ে নতুন রানীর সংযোজন করতে হবে। সাধারণত বৃদ্ধিকালের শেষ দিকে মৌমাছিরা ঝাঁক বাঁধে। ঝাঁক বেঁধে মৌমাছিরা যাতে অন্য কোথাও উড়ে চলে না যায় এজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। চাকে নবনির্মিত পুরুষ, রাণী মৌমাছিরা ঝাঁক বেঁধে অন্য কোথাও উড়ে যাবে না। মৌমাছির সংখ্যা যদি অনেক বেশী হয় তবে তাদের একাধিক বাক্স ভাগ করে দেয়া উচিত মৌমাছির বংশ বৃদ্ধিকালে মাঝে মাঝে কলোনী পরীক্ষা করে তাদের অন্যান্য সমস্যার প্রতিও দৃস্টি রাখতে হবে।

২। খাদ্য সঞ্চয়কালে-এ সময়ে প্রকৃতিতে প্রচুর ফুল পাওয়া যায়। মৌমাছিদের সংগ্রহীত পরাগরেণু বাচ্চা মৌমাছিদের খাওয়ানো হয়। ফুলের রস দিয়ে মৌমাছিরা মধু তৈরি করে মধুঘরের চাকে জমা করে। মধু রাখার স্থানের যাতে অভাব না হয় এজন্য মধু ঘরে আরও নতুন চাক দিতে হবে। চাকের শতকরা ৭৫ টি কুঠুরি যখন ঘন মধুতে ভরে মৌমাছিরা ঢাকনা দিয়ে ফেলবে, তখন সে চাক থেকে মধু নিষ্কাশন করে নিতে হবে। প্রয়োজনবোধে মৌমাছি পালনক্ষেত্র তেকে কিছু মৌবাক্স সরিয়ে অন্য স্থানে নিতে হবে যাতে বিশেষ কোনো এলাকা থেকে মৌমাছিরা আরও বেশী মধু সঞ্চয় করতে পারে। শীতের প্রচন্ড প্রকোপে মৌমাছিদের যেন কষ্ট না হয় এজন্য শীতের রাতে মৌবাঙ্টি চট বা ছালা দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।

৩। খাদ্য সঙ্কটকালে- এ সময়ে প্রকৃতিতে খাদ্য সংগ্রহ করার মতো ফুল খুব কম থাকে, ফলে মৌমাছিরা খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। খাবারের অভাব মিটাতে এ সময় চিনির সিরাপ মিশিয়ে এই সিরাপ তৈরি করা হয়। যে পাত্রে সিরাপ পরিবেশন করা হবে সেটি বাঙ্রে ভেতরে রেখে সিরাপের পরে একটি কাঠি বা পাতা দিতে হবে, যাতে মৌমাছিরা তার ওপরে বসে রস খেতে পারে। সিরাপ রাতে একটি নির্দিষ্ট সময়ে (সন্ধ্যা) পরিবেশন করা উচিত, যাতে অন্য বাক্সে মৌমাছিরা এসে খাবারের জন্য মারামারি না বাধায়। ঝড়বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে মৌবাঙ্টির প্রবেশ পথ বাতাস ও বৃদ্ধির বিপরীতমুখী করে নিরাপদ, শুষ্ক স্থানে রাখতে হবে। অন্যথায় বাক্সে ছাদের উপর আবরণ দিয়ে প্রবল বৃষ্টি হাত থেকে মৌমাছিদের রক্ষা করতে হবে। খাদ্য সঙ্কটকালে কলোনী দূর্বল হয়ে পড়তে পারে। বাক্স চারটি চাকের কম সংখ্যাকে চাকে মৌমাছি একত্র করে একটি মৌবাক্স স্থান করে দেয়া উচিত। খাদ্য সঙ্কট সব এলাকায় একই সময়ে দেখা দেয় না। এ জন্য মৌবাক্স এমন এলাকায় স্থানান্তর করা যায়, যেখানে প্রচুর ফুল পাওয়া যাবে। খাদ্য সঙ্কটকালে মৌমাছিদের রোগ-জীবানূ বেশী হয় বলে এ সময় কলোনীর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।

খ) শত্রু এবং রোগ

বিভিন্ন প্রকার শত্রু ও রোগের আক্রমনে মৌমাছি কলোনী ক্ষতিগ্রস্থ হয়। দু'একটি প্রধান শত্রু ও রোগের বিষয়ে এখানে আলোচনা করা হলে। মোমপোকা-ভিজে, স্যাতসেঁতে আবহাওয়ায় মোমপোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশী হয়। চাকের কুঠুরির উপরে মাকড়সার জালের ন্যায় আবরণ দেখেই বোঝা যায়। একটি মোপোকারয় আক্রান্ত ঢাকনাযুক্ত পিউপার কুঠুরির মুখ খোলা এবং ভেতরে মৃত পিউপা পাওয়া যায়। এ সমস্যার প্রতিকার হল মৌবাক্স পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, পুরনো ও ময়লা চাক সরিয়ে ফেলা এবং পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট দিয়ে বাঙ্রে মেঝে পরিস্কার করা। মোমপোকার আক্রমণ দেখা দিলে প্যারাডাইক্লোরো বেনজিন নামক ওষুধ সামান্য পরিমানে বাক্স কোণায় রেখে দিলে এই পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এ ময়ে রাতে বাক্সের গেইট বন্ধ করে রাখতে হবে এবং সকালে খুলে দিতে হবে। অ্যাকারাইন এ রোগ সাধারণত পূর্ণবস্ক মৌমাছিদের হয়ে থাকে। রুগ্ন মৌমাছির ডানাগুলো বিভক্ত হয়ে ইংরেজি অক্ষর 'K' এর মতো হয়ে যায় এবং অনেক মৌমাছিকে বাক্সে সামনে বুকে হাঁটতে দেখা যায়। বাক্সে সামনে আমাশয় এর মতো হলুদ পায়খানা পড়ে থাকে। মৌমাছিরা কলোনীর মধ্যে বিশৃংখলাভাবে ঝাঁক বেঁধে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে প্যারালাইসিস হতে দেখা যায়। আক্রান্ত রানী ডিম দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ্যাকারাইন হতে দেখা যায়। এ্যাকরাইন রোগের প্রতিকার হল-মৌবাঙ্রে ভেতরে মিথাইল স্যালিসাইলেটের বাষ্প দেয়া। এজন্য ছোট একটি বোতলে মিথাইল স্যালিসাইলেট নিয়ে রবার কর্ক দিয়ে মুখ বন্ধ করতে হবে।তথ্য সূত্র: শাইখ সিরাজ রচিত ‘মাটি ও মানুষের চাষবাস’ গ্রন্থ থেকে সংগ্রহীতমৌমাছি চাষ ও প্রশিক্ষনের জন্য যোগাযোগ করতে পারেনমতি এন্ড সন্স (একটি বিসিক প্রকল্প)৪৯/৩, লুৎফর রহমান লেন, সুরিটোলা, কোতয়ালী, ঢাকামোবাইল: ০১৭১২-০৬৯০৬২


চিকিৎসা:

মধু ও মৌমাছির বিষে বাত নিরাময়

মৌমাছি বা ভীমরম্নলের হুল ফুটানো বিষ খুবই যন্ত্রণাদায়ক। যে ব্যক্তি হুল দংশ্বনের শিকার হয়েছেন কেবল তিনিই তার জ্বালা অনুভব করতে পারেন। মানুষ এমনকি অন্যান্য প্রাণীও তাই মৌমাছি বা ভীমরম্নল চাক এড়িয়ে চলে, কিন্তু মৌমাছি ও ভীমরম্নলের হুল থেকে সংগৃহীত বিষ যে রোগ নিরাময়ের উপাদান হিসাবে কাজ করতে পারে তা অনেকেরই অজানা। নিউজিল্যান্ডের একটি কোম্পানি সে আমার বাণীই শুনিয়েছে। শুধু তাই নয়-মৌমাছির বিষ বাজারজাতকরণের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) কাছে অনুমোদন চেয়েছে। নেলসন হানি এন্ড মার্কেটিং নামে একটি কোম্পানি জানিয়েছে গেঁটে বাত জনিত ব্যথা নিরাময়ে প্রদাহ নিরোধক হিসাবে কাজ করে মৌমাছির বিষ। প্রতিদিন দুই চা চামচ পরিমাণ মধুর সঙ্গে সামান্য পরিমাণ মৌমাছির বিষ দুধ (ভেনম মিল্ক) মিশিয়ে সেবন করলে বাত রোগে উপসম হয়। তাদের মতে মৌমাছির বিষ প্রয়োগে বাতের চিকিৎসা নতুন ধারণা নয়। কোন কোন ক্লিনিকে মৌমাছির হুল ফুটিয়ে বাতের চিকিৎসা করা হয়। যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ডস এজেন্সি জানিয়েছে আগামী মাসে নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক কোম্পানিটির আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হতে পারে। কোম্পানিটি জানিয়েছে-নিউজিল্যান্ডের একটি অঞ্চলে গত ১৩ বছর যাবৎ এক প্রকার মৌমাছির চাষ করা হচ্ছে। আধুনিক পদ্ধতিতে সংগৃহীত মধু ও ভেনম মিল্ক সম্পর্ণ নিরাপদ। তবে ১২ বছরের কম বয়সী শিশুদের এসব সেবন নিষিদ্ধ।

একই সঙ্গে আরো একটি বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, মধু অথবা মৌমাছির বিষ যাদের শরীরে অ্যালার্জির উদ্রেক করে তারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করতে পারেন। অবশ্য এ ধরনের চিকিৎসার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করেছেন যুক্তরাজ্যের আথ্রাইটিস রিসার্চ ক্যাম্পেইনের কর্ণধার প্রফেসর অ্যালান সিলমান। তার মতে, মধু ও মৌমাছির বিষবাত নিরাময়ে ফলপ্রসূ এমন প্রমাণ এখনও মেলেনি।

বৃহস্পতিবার, ১০ জুন, ২০১০

ফড়িং এর বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য

ফড়িং এর বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্য
মোশারেফ হোসেন পাটওয়ারী

ফড়িং এর রয়েছে নিখুঁতভাবে ওড়ার ক্ষমতা। উড়ার বেগ যাই হোক না কেন, ওরা উড়তে উড়তে যে কোন দিকে ইচ্ছে মতো হঠাৎ থেমে যেতে পারে। শিকার ধরার জন্য বাতাসে সুবিধাজনক স্থানে ভেসেও থাকতে পারে। শিকার যে দিকেই থাকুক ফড়িং সে দিকেই দ্রূত বেগে ঝাঁপিয়ে পড়তে সক্ষম। ফড়িং এর প্যাঁচালো বা কুন্ডালাকার গঠণ, যা ধাতব আবরণ যুক্ত। ফড়িং এর দু'জোড়া পাখা। একজোড়া সামনের দিকে, অন্য জোড়া পিছনের দিকে। দু'জোড়া পাখা পরস্পর চমৎকার সমন্বয়ের সাথে কাজ করে।
পাখাগুলোর নাড়াচাড়া দু'টি পেশীপুঞ্জ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাধারণ তামাটে লাল, হালকা নীল বা বিভিন্ন রঙের ফড়িং আমরা দেখতে পাই। ফড়িং এর শরীরের ভর অনুযায়ী তৈরী চারটি পাখা তাদের সঠিকভাবে উড়তে সাহায্য করে। ফড়িং এর রয়েছে হঠাৎ ওড়ার ক্ষমতা, গতি বৃদ্ধি বা হ্রাসের ক্ষমতা, বাতাসে স্থির হয়ে ভেসে থাকার ক্ষমতা, ওড়ার সময় প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার পর্যন্ত যাওয়ার ক্ষমতা রাখে।
কীট-পতঙ্গদের মধ্যে ফড়িং এর চোখ সবচেয়ে সৌন্দর্য্যমন্ডিত। প্রতিটি চোখে রয়েছে ৩০,০০০ (ত্রিশ হাজার) পৃথক পৃথক লেন্স, মাথার অর্ধেকটা জুড়েই হরিণের চোখ। এ জন্যে সামনে পেছনে সহ বিশাল এলাকা দেখতে পায় ফড়িং। ফড়িং এর শরীরের যে কোন অংশের সামান্য সমস্যার কারণে তার পুরো শরীরটাই অচল হয়ে পড়ে। ফড়িং এর এসব বৈশিষ্ট্য আমাদেরকে অবশ্যই হেলিকপ্টারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।
আধুনিক প্রযুক্তি হিসাবে হেলিকপ্টার নির্মাণে উড্ডয়নে ও অবতরণের কৌশল নির্ধারণে ফড়িং এর এই বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যকেই ব্যবহার করা হয়েছে।
সৌজন্যেঃ- দৈনিক ইত্তেফাক

শনিবার, ১৫ মে, ২০১০

সুগন্ধি গাছ কারিপাতা

সুগন্ধি গাছ কারিপাতা
হিমালয়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে সুন্দরবনসংলগ্ন জনপদেও দেখেছি কারিপাতার গাছ জন্মাতে। উত্তরপ্রদেশে গারোয়াল-কুমায়ূনের ঝাউবিথীর নিচে, ঠাকুরগাঁওয়ের বাঁশবনে, নড়াইলের কাশবনে, কুমিল্লায় বার্ডে ক্যাফেটেরিয়ার পাশে, দাকোপের সাহেবের আবাদে লোনা মাটিতে- কোথায় না দেখেছি গাছটাকে। তবে কারিপাতার রান্না তামিলনাড়ুর চিদাম্বরমে আন্নামালাই বিশ্ববিদ্যালয়ে খেয়ে তবেই না এর স্বাদ বুঝেছি। কারিপাতাগাছ এ দেশে পরিচিত গাছ হলেও সুগন্ধি গাছ হিসেবে এর ব্যবহার প্রায় নেই বললেই চলে। কারিপাতা এদেশে কোথাও কোথাও নিমভুতগাছ হিসেবে পরিচিত। বনে জঙ্গলে জন্মে, আপনা আপনি হয়। কেউ কখনো এ গাছ লাগায় না। এগাছ অবশ্য কেউ কেউ কবিরাজী কাজে ব্যবহার করে থাকেন। তবে এর সুগন্ধি পাতা ব্যবহার করে এদেশে কেউ কখনো রান্না করেন না। কিন্তু ভারতের তামিলনাড়ুতে গিয়ে কারিপাতা ছাড়া রান্না কেউ না খেয়ে ফিরে এসেছে এমনটি শোনা যায়নি। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দক্ষিণ ভারতে রান্নাকে সুগন্ধিযুক্ত করতে কারিপাতার ব্যবহার চলে আসছে। খাদ্যকে শুধু সুস্বাদু করাই নয়, এ পাতার কিছু ভেষজগুণও আছে। তাই আমাদের বুনো এ গাছটির পাতা তেজপাতার মতো মসলা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এ গাছ চাষে আলাদা কোনো জমি দরকার নেই। বাড়ির আশপাশে যেসব বাগানের ভেতর ছায়া ছায়া ফাঁকা জায়গা পড়ে রয়েছে সেসব পতিত জায়গা ব্যবহার করে কারিপাতা উৎপাদন করে বাড়তি আয়ের সুযোগ সৃষ্টি করা যেতে পারে।


গাছের পরিচয়

মূলত কারি বা ঝোল তরকারি রান্নার জন্য এ গাছের পাতা ব্যবহার করা হয় বলে এর ইংরেজি নাম কারি লিফ, বাংলায় কারি পাতা। বাংলায় স্খানীয় কিছু নামও আছে- নিমভুত, বারসাঙ্গা ইত্যাদি। তামিল ভাষায় বলে কারিভেম্পু, তেলেগুতে কারেপাকু। হিন্দিতে বলে কাঠনিম, মিঠানিম, গোরানিম, গাধেলা, কারি পাত্তা ইত্যাদি। উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম abcdr, পরিবার রুটেসী। অর্থাৎ কারি পাতা ও কামিনী ফুলের গাছ একই গোত্রের। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১৫০০ মিটার উঁচুতেও কারিপাতাগাছ জন্মাতে পারে। গাছ মাঝারি উচ্চতার, উচ্চতায় ৫-৬ মিটার হয়। পাতা দেখতে অনেকটা নিম পাতার মতো। পাতায় সালফারঘটিত এক ধরনের উদ্বায়ী তেল থাকার কারণে সুন্দর ঝাঁঝাল গন্ধ আসে। কাঁচা পাতা ডললে পাতা থেকে গোলমরিচ, লবঙ্গ, মরিচ, আদা ইত্যাদি মসলার মিশ্রিত এক প্রকার ঘ্রাণ বের হয়। এই সুগন্ধির জন্যই কারিপাতা রান্নায় মসলাপাতা হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পাতা পক্ষল ও যৌগিক, নিমপাতার মতোই। তবে পাতাগুলো ডালের মাথা থেকে চারদিকে সূর্যের রশ্মির মতো ছড়িয়ে পড়ে। তাই পত্রবিন্যাস সুন্দর দেখায়। প্রতিটি পাতায় অনুপত্রকের সংখ্যা ৯-১৫টি। অনুপত্রকের কিনারা খাঁজকাটা, অগ্রভাগ সূচালো। ডালের মাথায় পুষ্পমঞ্জরীতে সাদা রঙের ফুল ফোটে, ফুলেও সুগন্ধ আছে। ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে ফুল ফোটে। ফুল থেকে নিমের মতো ফল হয়। ফল ডিম্বাকার থেকে গোলাকার, কাঁচা ফলের রঙ সবুজ। পরিপক্ব হওয়ার সাথে সাথে লালচে থেকে কালো হয়ে যায়। বীজ থেকে সহজে চারা হয়।


ব্যবহার

সুগন্ধি মসলা হিসেবে সবুজ পাতা রান্নায় ব্যবহার করা যায়। পাতায় ৬।১% প্রোটিন, ১।০% তেল, ১৬% শ্বেতসার, ৬।৪% আঁশ ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি (৪ মিলিগ্রাম/১০০গ্রাম পাতা) আছে। কাঁচা কারিপাতা কয়েকটা পানিতে ধুয়ে রান্নার সময় তার ভেতরে ছিঁড়ে দিলে রান্নায় সুঘ্রাণ ও ঝাঁঝ আসে। গরু ও খাসির গোশত, মিশ্র সবজি, ডাল ইত্যাদি কারিপাতা দিয়ে রান্না করা যায়। কারিপাতা শুকনো করে গুঁড়ো হিসেবে কারি পাউডার তৈরি করা যায়। বোতলে ভরে রেখে রান্নার সময় তা ব্যবহার করা যায়। তবে কাঁচা পাতায় ঘ্রাণ বেশি। কারিপাতা, গাছ, শিকড় সবই ভেষজ গুণসম্পন্ন। গাছের শিকড় অর্শ রোগে উপকারী। আমাশয় ও ডায়রিয়া সারাতেও কারিপাতা ওস্তাদ। কয়েকটা সবুজ পাতা চিবিয়ে খেলে এটা সেরে যায়। পাতা সেঁকে ও তা থেকে ক্বাথ তৈরি করে খেলে বমিভাব দূর হয়। রেচনতন্ত্রের ব্যথা দূর করতে পাতার রস সেবন করতে পরামর্শ দেয়া হয়। শরীরের কোথাও কোনো বিষাক্ত পোকা কামড়ালে কাঁচা কারিপাতা ডলে সেখানে লাগালে দ্রুত উপশম হয়। যকৃতের কঠিন ব্যথা সারাতে রোগীদের কারিপাতা গাছের শিকড়ের রস খাওয়ানো হয়। শুধু পাতা নয়, এর ফলও খাওয়া যায়। বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার গন্ধ অনেকটা নারকেল তেলের মতো আর স্বাদ মরিচের মতো ঝাঁঝালো। তেল জিহ্বায় স্পর্শ করলে ঠাণ্ডা মনে হয়।


চাষাবাদ

বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হবে। বর্ষার শুরুতে ২-৩ মিটার পর পর জমিতে চারা লাগাতে হবে। চারা লাগানোর জন্য সবদিকে আধা মিটার আন্দাজে গর্ত তৈরি করে গর্তের মাটির সাথে এক ঝুড়ি গোবর সার মিশিয়ে সপ্তাহ দুয়েক রেখে দিতে হবে। জুন-জুলাই মাসে চারা লাগাতে হবে। প্রতি বছর জুলাই মাসে একবার গাছপ্রতি ১০০-২০০ গ্রাম ইউরিয়া সার দিতে হবে। খরার সময় সেচ দিলে উপকার হয়। গাছের বয়স ১৫ মাস হলেই গাছ থেকে পাতা তোলা শুর করা যায়। কচি পাতা না তুলে গোড়ার দিক থেকে বয়স্ক পাতা তুলে আঁটি বেঁধে বাজারে বেচতে পাঠাতে হবে। ঘরোয়া ব্যবহারের জন্য একটা দুটো গাছই যথেষ্ট। বাণিজ্যিকভাবে চাষের আগে এর বাজার সম্বন্ধে নিশ্চিত হতে হবে। এ গাছে সহজে কোনো রোগ পোকা আক্রমণ করে না।


লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়

তথ্যসূত্র: দৈনিক নয়াদিগন্ত



বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০০৯

পোলাও পাতার চাষ

পোলাও পাতার চাষ

গাছটা ঠাকুরগাঁওয়ের জঙ্গলে দেখেছি। অযত্নেই বেশ ঝোপ করে জন্মেছে। পরে সেখানকার বেশ কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বেড়ানোর সময় কয়েকটা বাড়িতেও দেখলাম পোলাও পাতার গাছ। ঘরের কোণে এক পাশে ঝোপ করে বাড়ছে সে গাছ। আবার সুন্দরবনের ঠিক এপাড়ে শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ বাজারেও দেখলাম এক দোকানি টবে ও মাটিতে কয়েকটা পোলাও পাতার গাছ লাগিয়েছেন। পরে খুলনাতেও দেখা হলো পোলাও পাতা গাছের সাথে। তার মানে গাছটা এ দেশে মোটেই দুর্লভ নয়। এক প্রকার বিনা চাষে ও যত্নেই সে বেড়ে ওঠে। পোলাও পাতার স্বাদ অবশ্য প্রথম পেয়েছিলাম ওই ঠাকুরগাঁতেই, এক বাড়িতে চায়ের আমন্ত্রণে। দুধবিহীন লাল রঙের সেই চা থেকে পোলাওয়ের ঘ্রাণ আসছিল। অপূর্ব লাগছিল স্বাদটা। কেননা সচরাচর আমরা যে চা পান করি, সেই স্বাদই মুখে লেগে থাকে, ওই স্বাদেই আমরা অভ্যস্ত। তাই ভিন্ন স্বাদ পেলেই সেটা অন্য রকম লাগে। বাড়ির গৃহিণীকে জিজ্ঞেস করতেই তিনি ঘরের কোণে থাকা গাছটা দেখিয়ে দিলেন এবং তা থেকে এক টুকরো পাতা ছিঁড়ে এনে দিলেন। বললেন, ডলে ঘ্রাণ শুঁকে দেখুন। তা-ই করলাম, অবিকল কাটারিভোগ চালের ঘ্রাণ এলো পাতা থেকে। বুঝলাম, পোলাও পাতা নামটা ওর যথার্থ। গৃহিণী জানালেন, ওই পাতার গুণে তারা মাঝে মধ্যে সাধারণ চাল দিয়েই পোলাওয়ের ঘ্রাণমাখা ভাত খান। এত যার গুণ, সেই গাছটিই কিনা অচেনা!

গাছের পরিচয়


পোলাও পাতার গাছের আকৃতি ও পাতার চেহারা দেখতে অনেকটা কেয়াগাছের মতো। তবে কেয়াগাছের মতো অত বড় হয় না। ছোট ঝোপালো প্রকৃতির গাছ। গাছ বহুবর্ষজীবী, একবার লাগালে বাঁচে অনেক দিন। আনারসগাছের মতো মোথা থেকে চার দিকে কিছুটা খাড়াভাবে তলোয়ারের মতো পাতা বাড়তে থাকে। পাতার দৈর্ঘ্য ৫০-৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্খ ৩-৪ সেন্টিমিটার। পাতা চকচকে সবুজ, পুরু চামড়ার মতো, একটু শক্ত, পাতার কিনারা মসৃণ। অগ্রভাগ সুঁচালো। এ গাছের উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Pandanus odoratissimus Pandanaceae।


ব্যবহার

গাছের পাতায় পোলাওয়ের মতো গìধ আছে বলেই এর নাম পোলাও পাতা গাছ। এই সুগìধ দিয়ে খাদ্যদ্রব্য সুরভিত করতেই পোলাও পাতা গাছ ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে সুগìধবিহীন সাধারণ চাল দিয়ে ভাত রান্নার সময় এই পাতা ব্যবহারে সেসব ভাতেও পোলাওয়ের ঘ্রাণ আসে। ভাত রেঁধে মাড় ফেলে দেয়ার পর তাতে পোলাও পাতা মিশানো হয়। পোলাও পাতা ৩-৪ সেন্টিমিটার টুকরো টুকরো করে কেটে গরম ভাতের স্তরে স্তরে বিছিয়ে দেয়া হয়। তারপর একটা ঢাকনা দিয়ে পাত্রের মুখ ঢেকে রাখা হয়। কিছুক্ষণ এভাবে রেখে দিলে ভাতে সুঘ্রাণ আসে। খাওয়ার সময় সেই ভাত থেকে পোলাওয়ের সুঘ্রাণ পাওয়া যায়, ভাত খেতে তৃপ্তি আসে। তবে চা বানানোর জন্য চায়ের পানি ফুটে এলে তার ভেতর পোলাও পাতার কয়েকটা টুকরো ছেড়ে দেয়া হয়। তারপর সেই পানি ছেঁকে চায়ের মতো খেলে সেই চা থেকেও পোলাওয়ের সুঘ্রাণ ভেসে আসে। একইভাবে বিভিন্ন রকম স্যুপ, জাউভাত, ফিরনি, পায়েস ইত্যাদি সুগìধযুক্ত করতে পোলাও পাতা ব্যবহার করা যায়।


চাষাবাদ

গাছের কাণ্ডের গিঁট থেকে কুশির মতো চারা বের হয়। এসব চারা লাগিয়ে নতুন গাছ জন্মানো যায়। চাষের জন্য প্রথমে গাছ সংগ্রহ করতে হবে। তারপর সেই গাছ লাগিয়ে বড় করতে হবে। বড় হলে তার কাণ্ডের চার পাশ থেকে তেউড় বা চারা বের হবে। সেসব চারা গাছ থেকে কেটে আলাদা করে বীজতলায় পুঁতে পানি দিলে কয়েক দিনের মধ্যেই তার গোড়া থেকে শিকড় বের হবে। সেসব চারা সরাসরি জমিতে লাগানো যেতে পারে অথবা বাড়ির আঙিনায় ঝোপ করার জন্য এক জায়গায় কয়েকটা গাছ লাগানো যেতে পারে। লাগানোর পর কয়েক দিন সেচ দেয়া ছাড়া আর বিশেষ কোনো যত্নের দরকার হয় না। আধোছায়া ও রোদেলা জায়গায় ভালো জন্মে। কোনো সার দেয়ার দরকার নেই। তবে লাগানোর সময় মাটির সাথে বেশি করে জৈবসার মিশিয়ে দিলে পরে গাছের চেহারা ও বৃদ্ধি ভালো হয়। বছরের যেকোনো সময় গাছ থেকে পাতা তোলা যায়। তোলার সময় গোড়ার দিকের বয়স্ক পাতা তোলাই ভালো, না হলে সেগুলো পুরনো হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। গাছ যেমন কষ্ট সইতে পারে তেমনি বাড়েও ভালো। তবে বাণিজ্যিকভাবে এই পাতা চাষের সময় এখনো আসেনি।

দেখুন পাম চাষ : বহুমুখি লাভের কৃষি

লেখক: মৃত্যুঞ্জয় রায়

তথ্যসূত্র: দৈনিক নয়া দিগন্ত

মঙ্গলবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০০৯

deshitech

deshitech (দেশীটেক) ফেসবুকে একটি সাহায্যকারি গ্রুপ, যারা বিনা পারিশ্রমিকে কম্পিউটার বিষয়ক সাহায্য করে থাকে।

প্রথমে আপনি deshitech এর সদস্য হয়ে যান। এরপর লিখুন আপনার কি সমস্যা। অপেক্ষা করুন। আপনার সমাধানটি দেখুন চলে এসেছে।


এছাড়াও, ://www.deshitech.com নামের সাইটটি অচিরেই আপনাদের মাঝে উপস্থিত হবে। আশা করি, যে কোন টেকনিক্যাল হেল্প আমরা করতে পারব।

deshitech

deshitech. দেশীটেক।
দেশীয় টেকনোলজি।
আমাদের এখানে পাবেন সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরী কৃত নতুন সব দৈনন্দিন সাজসরঞ্জাম। আমাদের ওয়েবসাইট http://www.deshitech.com এখন কর্মাধীন। কিন্তু আমাদের টুলবার (toolbar) deshitech toolbar এখন অনলাইনে পাবেন। এই টুলবারে আপনার পছন্দের অনেক কিছুই পাবেন বলে আশা করি। তবে হা, এই টুলবারে (toolbar) আপনারা আরো যা কিছু চান, অনুগ্রহ করে বলুন, আমরা আপনার পছন্দের লিংক টি এখানে দিয়ে দেব।


আইয়ুব হোসেন

শনিবার, ২৭ জুন, ২০০৯

ছেলেমেয়েদের নেশা ছাড়ানো

ছেলেমেয়েদের নেশা ছাড়ানো


০ অধ্যাপক ডাঃ এ এইচ মোঃ ফিরোজ

যেসব ছেলেমেয়ে নিয়মিত অ্যালকোহলের নেশা করে তাদের মধ্যে আচার-আচরণের অস্বাভিবিকতা বা অসংলগ্নতা দেখা যায়। তারা কিন্তু অ্যালকোহলের জন্য এই আচার ব্যবহারের অস্বাভিবিকতা কে 'অস্বীকার' করে থাকে। অস্বীকার করাটাই একটা বিশেষ মানসিকতা, যা নেশা করার জন্য ধীরে ধীরে গভীরে তৈরি হয়।

রুহিত বন্ধুদের সঙ্গে কলেজ পালিয়ে বারে বসে রোজ আড্ডা দেয় ও মদ খায়। কেন দেরি করে বাড়ি ফেরে এই প্রশ্ন করেছিলেন বলে মাকে যাচ্ছে তাই অপমান করল। কিন্তু পরে যখন তাকে প্রশ্ন করা হলো যে সে এরকম কেন করেছে তার উত্তরে সে প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে মাকে অপমান করার কথা অস্বীকার করল। তার বক্তব্য সে রকম কিছুই হয়নি।

অস্বীকার করা, মিথ্যা বলা বা অজুহাত দেয়া যারা নিয়মিত অ্যালকোহলের নেশা করে, তাদের অনেকের মধ্যে দেখা যায়। দায়িত্ব এড়ানোর জন্য তাদের ওপরে অন্যের ভরসাও চলে যায় এবং অনেকেই এদের এড়িয়ে চলতে শুরু করে। এই অস্বীকার করার পেছনে যে মানসিকতা কাজ করে তা হলো অ্যালকোহল সম্বন্ধে ভিন্ন চিন্তাধারা।

মদ খেয়ে বা মদের নেশায় অস্বাভিবিক আচার-আচরণ যাকে সোজা কথায় ‘মাতলামি’ বলা হয়, কেউই সহ্য করতে চান না। যারা অ্যালকোহল খায় তাদের প্রায় ২০% এর অপকারিতার শিকার হয়, তারা নিজেদের সংযত করতে পারে না, অ্যালকোহলের পরিমাণ ক্রমশ বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত বিপদ ডেকে আনে। সুতরাং মদ বা অ্যালকোহল যে খায় তাকে ‘দুষ্ট স্বভাবের মানুষ’ না মনে করে ‘অসুস্থ’ ভাবলে সহানুভূতির সঙ্গে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়।

‘আমি মদ খাই, মদ আমাকে খায় না’ এই মনোভাবই অ্যালকোহলের নেশাকে বাড়িয়ে দেয়, যে মদ্য পান শুরু করে তার সঙ্গে হাজারো যুক্তিও থাকে। যেমন-

০ আমি দুঃখ-কষ্ট ভুলতেই মদ খাই।

০ নেশা করলে আমার শরীর-মন ভাল থাকে।

০ কাজকর্মে উৎসাহ পাই অথবা

০ আমি জানি কতটুকু অ্যালকোহল খেতে হবে

০ কী পরিমাণে খেতে হবে

০ কী পরিমাণে খেলে ক্ষতি হয়।

০ আমি এত বোকা নই যে নিজের ক্ষতি করব, এই সমস্ত হলো অস্বীকার করার বিভিন্ন অজুহাত।

নেশাগ্রস্ত ছেলেমেয়েদের নেশা ছাড়ানোর মানসিক প্রস্তুতি অনেক সময়েই থাকে না। তাদের মোটিভেট না করেই তাড়াহুড়ো করে চিকিৎসা করালে ফল পাওয়া কঠিন। অনেক ছেলেমেয়েই ‘নেশাবিহীন’ অবস্থায় সাময়িকভাবে নেশা ছাড়ার সদিচ্ছা বা মনোভাব প্রকাশ করে থাকে।

মানসিক অবস্থার বিচার-বিবেচনা, পরিস্থিতি, অভিজ্ঞতা দিয়ে একজন সত্যিই নেশা ছাড়তে ইচ্ছুক কিনা বুঝতে পারা যায়। অবশ্য এ ব্যাপারে কোনো কোনো সময় ভুল হতেই পারে। তবু সম্ভাব্যতার ওপর বিচার-বিবেচনা করেই এগোতে হয়। অনেক সময় একজন নেশাগ্রস্ত ছেলে নেশার কবলে পড়ে নানারকম অজুহাত তৈরি করে। তারা বলে থাকে ‘কী করব নেশা তো ছাড়তেই চাই কিন্তু নেশা করি আর না-ই করি বদনাম দেবেই’ এছাড়া অজুহাত দেখায়। ঝগড়াঝাটি, বিরক্তি, হতাশা প্রভৃতির কারণে অনেক নেশাগ্রস্ত ছেলেমেয়েই মনের উত্তেজনা, নেশা ছাড়ার জন্য সাময়িক কষ্ট, সাময়িক বিভিন্ন উপসর্গ সহজে মেনে নিতে চায় না। ‘অবচেতন’ মনকে ‘চেতন’ মন দিয়ে অনেক সময় অস্বীকার করলেও অবচেতন মন মনের অবদমিত আবেগ, নিগূঢ় ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করবেই। নিজেকে কষ্ট দেয়া, নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা, মৃত্যুর আকাঙক্ষা মানুষকে নেশায় আসক্ত হওয়ার পথে ঠেলে দেয়। দুর্ভাগ্যবশত শত যুক্তি-তর্ক বা বিচার-বিবেচনা তখন কোনো রকমে কাজ করে না বা করতে চায় না।

মাদকদ্রব্যের প্রতি আকর্ষণ এবং ব্যবহারের খারাপ ও ভয়াবহ পরিণতি কখনো কখনো নেশাক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের বিচলিত, বিভ্রান্ত, ভীত করে থাকে। নেশা শুরু করার পর ছাড়া যায় না অথবা নেশা বন্ধ করলে এত কষ্ট হয় যে আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে প্রভৃতি কথা তাদের মনকে এতটাই বশীভূত করে যে তারা কিছুতেই নেশা ছাড়ার জন্য চিকিৎসা করাতে রাজি হয় না। এছাড়া নেশার চিকিৎসা সম্বন্ধে ভুল ধারণা, অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতি, নেশাক্রান্ত ছেলেমেয়ের পরিচয় গোপন না রাখা নেশার চিকিৎসাকে ব্যর্থ করে থাকে। যারা চিকিৎসার সঙ্গে জড়িত তারা অনেক সময় নিজেদের প্রচার ও বাহবার জন্য সবার সামনে নেশাগ্রস্ত ও নেশা ছেড়েছে- এমন ছেলেমেয়েদের পরিচয় দিয়ে থাকেন। তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে।

নেশায় আক্রান্ত কিশোর-কিশোরীদের অভিভাবক বা মা-বাবা প্রথমে নেশার ব্যাপারটি জানতে বা বুঝতে অনেকটাই সময় নিয়ে নেন। অবশ্য এর জন্য তাদের দোষ দেয়া যাবে না, কারণ অন্যান্য অসুখ-বিসুখের ক্ষেত্রে কতগুলো বাহ্যিক লক্ষণ থাকে, যা দিয়ে রোগীকে সহজেই চিনে নেয়া যায়। কিন্তু নেশার ব্যাপারে প্রথম থেকেই একটা অলিখিত লুকোচুরির খেলা শুরু হয়ে যায়। না জেনে মাদকদ্রব্য অনেক ছেলেমেয়েই প্রথমে ব্যবহার করে ও পরে আসক্ত হয়ে পড়ে। যে নেশা করছে সে যখনই বুঝতে পারে যে তার নেশা করাটা অনেকের চোখেই ভালো নয় তখনই সে লুকাতে চেষ্টা করে। নেশা করা খারাপ- এটা অনেক ছেলেমেয়েই জানে তবুও ‘জেনে শুনে বিষপান’ এর মতো নেশার প্রতি আসক্ত পড়ে। সুতরাং যে কিশোর-কিশোরী জেনেশুনেই নেশা শুরু করেছে সে নেশা ছাড়তেই বা চাইবে কেন? নেশার চিকিৎসার সাফল্য নির্ভর করে-

০ নেশার দ্রব্যের গুণাগণ

০ একজনের নেশা করার ক্ষমতা

০ কতদিন ধরে ব্যক্তিটি আসক্ত হয়েছে

০ তার মানসিক অবস্থা কী পর্যায়ে আছে ইত্যাদির ওপর

পরিবেশ এবং পরিস্থিতির ওপরও মাদকাসক্তির চিকিৎসা অনেকখানি নির্ভর করে থাকে। একটি ছেলে বা মেয়ের বাড়ির পরিবেশ, বন্ধু-বান্ধবের প্রভাব, পাড়া-প্রতিবেশির আচার-ব্যবহার তার নেশা করা বা নেশা ছাড়া দুটিকেই যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। অনেক সময় নেশা করতে গিয়ে পারিবারিক ও সামাজিক দিক দিয়ে অনেক রকমের সমস্যার সৃষ্টি হয়। পাড়াতে, মহল্লায় বা বাড়িতে নেশা করার জন্য মারধর, ভয় দেখানো, ঘরে বন্ধ করে রাখা, পুলিশি হামলা, ঝামেলা অনেক সময় ছেলেমেয়েদের নেশা ছাড়ার থেকে নেশা করে যাওয়ার দিকে নিয়ে যায়।

নেশার চিকিৎসা বিষয়টি যেমন জটিল, কষ্টসাধ্য, তেমনি অনেকটা কুয়াশাচ্ছন্ন। তাই এ ব্যাপারে অভিজ্ঞ মনোবিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। নেশার জিনিসের প্রতি আসক্তি কিন্তু একটা অসুখ- যা শরীর-মন দুটোকেই অসুস্থ করে তোলে এবং কিশোর বা কিশোরীর সামাজিক জীবনেও বিপর্যয় ডেকে আনে।

দৈনিক ইত্তেফাকের সৌজন্যে